প্রয়াগরাজের এবারের কুম্ভমেলায় দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েককোটি ভক্তের সমাগম হয়েছে। তবে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি ৪৫ দিনের এই মহাযজ্ঞের। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু, অগ্নিকাণ্ডের পর এবার শালীনতার সীমা ছাড়াল সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া নারীদের স্নানের ভিডিও।
টেলিগ্রামে আবার বিক্রিও হয়েছে সেই ছবি
তদন্তে নেমে ওই সমাজ মাধ্যম হ্যান্ডেলগুলো চিহ্নিত করেছে উত্তর প্রদেশের পুলিশ। সম্প্রতি ইন্ডিয়া টুডেতে প্রকাশিত একটি খবরে জানা যায় মহাকুম্ভে পূণ্যস্নান করতে যাওয়া নারী পুণ্যার্থীদের আপত্তিকর ছবি এবং ভিডিও তোলা হয়েছে। কেবলমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া নয়, টেলিগ্রামে রীতিমতো দর হাঁকিয়ে বিক্রি হয়েছে সেই ছবি।
এই ঘটনাকে ‘সাংঘাতিক’ বলে চিহ্নিত করেছেন মানসিক স্বাস্থ্য অধিকার কর্মী রত্নাবলী রায়।
তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘এটা এক কথায় মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
এবারের কুম্ভে নারী পুণ্যার্থীদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। রত্নাবলী বলেন, ‘এটা ব্যক্তিগত পরিসরে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ। যারা পুণ্য লাভের জন্য এতদূর যাত্রা করেছেন তারা এই স্নানের পরিসরকে ভরসা করেছিলেন।
তাদের সেই বিশ্বাস ভঙ্গ হলো।’
সমাজ মাধ্যমের বিপদ চিহ্নিত করে তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক মেরুকরণ করছে সমাজ মাধ্যম। তিনি বলেন, ‘পুরুষতান্ত্রিকতাসহ সকল সংকীর্ণ ধারণার আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছে সমাজ মাধ্যম।’
এই ঘটনার পিছনে ভারতীয় সমাজের সাংস্কৃতিক পরিসরে পুরুষতান্ত্রিকতার উপস্থিতি, অবদমিত যৌন চিন্তা এবং যৌন চেতনার অভাবকে দায়ী করেছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রীমা মুখোপাধ্যায়।
ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘মহাকুম্ভে ভক্তি ভরে স্নানের পিছনে আমাদের সমাজের অবদমনের চিত্র ফুটে উঠেছে এই ঘটনায়।
ভয়ারিজম তো এক রকমের মানসিক বিকার।’
১৭ এবং ১৯ ফেব্রুয়ারিতে করা দুটি অভিযোগের ভিত্তিতে এই ঘটনার তদন্ত করছে উত্তর প্রদেশের পুলিশ। এই ব্যাপারে মেটার সাহায্য নেওয়া হবে বলে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায় তারা।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন বিভাগের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, ‘আপত্তিজনক’ ছবি ইন্টারনেটে ছড়ানো আইটি আইনে দণ্ডনীয়। নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে ওই পুলিশ কর্তা বলেন, ‘এক্ষেত্রে তদন্ত করে নির্দিষ্ট অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব।’ এই অপরাধে তিন থেকে পাঁচ বছরের জেল এবং পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
১৩ জানুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা মহাকুম্ভের পুণ্যস্নানে প্রায় ৫৬ কোটি মানুষের সমাগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকেও বহু মানুষ এই মহাযজ্ঞে অংশ নিয়েছেন।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ডাকে গায়িকা ইমন চক্রবর্তী মহাকুম্ভের এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং তার পরে সঙ্গমে পুণ্যস্নান করেন।ইমন জানান তার অভিজ্ঞতা ভালো। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমি পায়ে হেঁটে সঙ্গম পর্যন্ত গেছি।
প্রচুর মানুষের ভিড়ে হইচই হলেও আমার কোনো অসুবিধা হয়নি।’তবে এই ঘটনাকে অনভিপ্রেত বলেন গায়িকা। তিনি বলেন, ‘কেবলমাত্র কুম্ভে নয়, এই ঘটনা আমাদের চারপাশে অবিরত ঘটে চলে। অনুমতি না নিয়ে ছবি তোলা হলে আমি অসম্ভব বিরক্ত হই এবং প্রতিবাদ করি।’
No comments:
Post a Comment