Saturday, April 5, 2025

এক পাঞ্জাবির দাম ৪ লাখ, শাড়ি দেড় লাখ টাকা! যা বলছেন বিক্রেতারা

সংগৃহীত ছবির্

রাজধানীর একটি ফ্যাশন আউটলেটে চার লাখ টাকায় বিক্রি করছে একটি পাঞ্জাবি। অন্য একটি ফ্যাশন আউটলেটে শাড়ির দাম দেড় লাখ টাকা। এখন প্রশ্ন উঠছে, পাঞ্জাবি ও শাড়ির কী বিশেষত্ব রয়েছে যে, এত দামে বিক্রি করতে হয়েছে? এ ছাড়া কারা এসব পাঞ্জাবি ও শাড়ির ক্রেতা?

বিক্রেতারা বলছেন, পাঞ্জাবি ও শাড়ির বেশি দাম হওয়ার অন্যতম কারণ উন্নতমানের কাপড় ও দক্ষ কারিগরের নিপুণ কাজ। এ ছাড়া পারসেপশন ভ্যালুকেও কেউ কেউ দাম বেশি হওয়ার কারণ ‍হিসেবে জানিয়েছেন।

তারা জানান, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে কলেজ শিক্ষার্থীরাও এসব পাঞ্জাবি ও শাড়ির ক্রেতা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগে দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারাই ছিলেন এসব দামি পোশাকের অন্যতম ক্রেতা। সরকার পতনের পর এসব দামি পোশাকের বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। 

রাজধানীর বনানীর কয়েকটি ফ্যাশন আউটলেট ঘুরে বেশি দামি পাঞ্জাবি ও শাড়ি এ তথ্য জানা গেছে।প্রিমিয়াম ফ্যাশন ব্র্যান্ড আনজারায় চার হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৯৫ হাজার টাকার পাঞ্জাবি রয়েছে। তাদের আউটলেটে কাফতান শাড়ির দাম ১৪ হাজার ৮০০ থেকে ১৬ হাজার ৮০০ টাকা।

একই এলাকায় আরেকটি ব্র্যান্ড জেকে ফরেন পাঞ্জাবি ও থ্রি-পিস বিক্রি করছে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকায়। এই দোকানে ৩৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে শাড়ি।
আনজারার জনসংযোগ ব্যবস্থাপক নওশিন নাওয়ার জানিয়েছেন, তাদের কাপড়ে হাতের মাধ্যমে এমব্রয়ডারির কাজ করা হয়। এ ছাড়া ভালো মানের ফেব্রিক, নিখুঁত ডিজাইন ও ডায়িংয়ের কারণে দাম বেশি। 
কয়েকটি দোকানের বিক্রয়কর্মীরা জানান, ঈদকে ঘিরে ভারত ও পাকিস্তানি পোশাকের ব্যাপক চাহিদা থাকে। ক্রেতাদের এই চাহিদা মেটাতে ব্র্যান্ডগুলো প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে প্রিমিয়াম পোশাক আমদানি করে মজুত রেখেছিল।
তারা জানান, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দামি পোশাকের বিক্রিতে ভাটা পড়েছে।বনানীর আবায়া অ্যান্ড গাউন ব্র্যান্ডের ম্যানেজার মোহাম্মদ আবু সাঈদ সাদ্দাম বলেন, আমরা নিজেরাই এসব পণ্য তৈরি করি। পাশাপাশি কিছু পণ্য দুবাই ও চীন থেকে আনা হয়। 
নিখুঁত ডিজাইন ও ভালো ফেব্রিক শুধু নয় পারসেপশন ভ্যালুকে দাম বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন দেশীয় ব্র্যান্ড কে ক্রাফটের পরিচালক খালিদ মাহমুদ খান। তিনি বলেন, বেশি দামের পেছনে অন্যতম একটি কারণ হলো পারসেপশন ভ্যালু। এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। এখানে শুধু উৎপাদন খরচ কত সেটা বিষয় নয়।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের পরিচালক ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, বিশ্বের কোথাও মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে দাম নির্ধারণের লিগ্যাল ফ্রেম নেই। যদিও বাংলাদেশে সরকার কিছু নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। 
তিনি বলেন, যদি কোনো ক্রেতা মনে করেন তিনি দামের ক্ষেত্রে প্রতারিত হয়েছেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভুক্তভোগী জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারেন। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া উচ্চমূল্যের পণ্য নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। এই দামগুলো আদৌ ন্যায্য কি না, সেই প্রশ্ন রয়েছে এবং বিক্রেতারা সবসময় এর স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেন না। সরকারের যথাযথ নজরদারির অভাবে কিছু ব্যবসায়ী এর সুযোগ নিচ্ছে। 

সূত্র : কালের কন্ঠ

No comments:

Post a Comment

Search This Blog

Powered by Blogger.