গায়ের রং ধবধবে ফরসা করার হাল আমলের সর্বনাশা ট্রেন্ডে ঝুঁকেছে কিশোরী থেকে মধ্যবয়সি নারীরা। চড়া দামে দেশিবিদেশি রং ফরসাকারী ক্রিম কিনছে অসচেতন ক্রেতা। এসব প্রসাধনী ত্বকে মেখে সর্বনাশ ডেকে আনছে তারা। ক্রিমে নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বহুগুণে বেশি থাকা বিষাক্ত ভারী ধাতু মারকারি বা পারদের কারণে ঝুঁকিতে পড়ছে তাদের স্বাস্থ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রং ফরসা করার নেশায় ক্রেতারা জেনে, না জেনে নিজের ক্ষতি করছে।
বিষাক্ত ক্রিম ব্যবহারে তাদের কিডনি, ফুসফুস, পাকস্থলী ও হৃদ্যন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে। গর্ভজাত শিশুও মায়ের ক্ষতিকর প্রসাধনী ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিপণিবিতান, দোকান, বাজার ও সমাজমাধ্যমের বিভিন্ন পেজ ও অনলাইনে এসব ক্ষতিকর ক্রিম দেদার বিক্রি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রামের মধ্যবয়স্ক নারীরা এসব ক্রিম বেশি ব্যবহার করেন। তাঁদের অনেকেই মারকারি কী জানেনই না। উৎপাদনকারীরা এর ক্ষতির বিষয়টি জেনেও ব্যবসার স্বার্থে বাজারজাত করছেন। তাঁরা নিষিদ্ধ পণ্যগুলোর অন্য নাম দিয়ে বাজারজাত করছেন।
দেশের রং ফরসাকারী ক্রিমগুলোতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও নিষিদ্ধ ভারী বিষাক্ত ধাতু মারকারি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নিরাপদ সীমা ১ পার্ট পার মিলিয়নের (পিপিএম) থেকে বহুগুণ বেশি পাওয়া গেছে। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো), ইউরোপীয় এনভায়রনমেন্টাল ব্যুরো এবং ফিলিপাইনভিত্তিক ব্যান ট্রক্সিকসের গবেষণায় সম্প্রতি এটি উঠে আসে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে পরীক্ষিত ২৬টি ত্বক ফরসাকারী ক্রিমের মধ্যে ২২টিতে পারদের মাত্রা নির্দিষ্ট সীমার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।
এতে সর্বোচ্চ ডিই বিউটি ক্রিমে (২৪,৮০০ পার্ট পিপিএম) এবং গোল্ডেন পার্ল বিউটি ক্রিমে (২০,৭০০ পিপিএম) মাত্রার মারকারি পাওয়া যায়। ২২টি পণ্যের মধ্যে তিনটি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) কর্তৃক নিষিদ্ধ। উল্লেখযোগ্য মাত্রায় মারকারির উপস্থিতি রয়েছে পার্ল বিউটি ক্রিমে (১০,০০০ পিপিএম), কিম হোয়াইটেনিং জিনসেং অ্যান্ড পার্ল ক্রিমে (৭,৪০০ পিপিএম)। দেশের ক্রিমগুলোর মধ্যে আছে ব্ল্যাক পার্ল স্কিন ক্রিম (৪,৭৮০ পিপিএম)।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে পারদ স্নায়ুতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করে। আন্তর্জাতিক জোট জিরো মারকারি ওয়ার্কিং গ্রুপ অনুযায়ী পারদযুক্ত ত্বক ফরসাকারী ক্রিম দীর্ঘমেয়াদে চোখ, ফুসফুস, কিডনি, হজম ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে। দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া ক্ষতিকর ক্রিমগুলোর মধ্যে আরও ছিল পাকিস্তান, চীন, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান ও ভিয়েতনামের উৎপাদিত ক্ষতিকর মারকারি ক্রিম।
এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাশেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মানুষের শরীরে ত্বকের নিচে ম্যালানিন নামক একটি জিনিস আছে। এটি অনেক বেশি পরিমাণে থাকলে ত্বক কালো দেখায়। হালকা থাকলে ত্বক একটু উজ্জ্বল দেখায়। মানুষের ত্বকে কমবেশি ম্যালানিন থাকে। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়। মারকারি মানবদেহে ম্যালানিন তৈরি বন্ধ করে দেয়। এতে রং উজ্জ্বল দেখাবে। দেহে যখন অতিরিক্ত পরিমাণে মারকারি চলে যাচ্ছে তখন তা রক্তের সঙ্গে মিশে বিষক্রিয়ায় কিডনি নষ্ট করে দেয়। এরপর এটি পাকস্থলী ও হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া নষ্ট করে দেয়। মারকারি ব্রেনের কাজেও ব্যাঘাত ঘটায়।
এটি গর্ভজাত শিশুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। গর্ভবতী যে মায়েরা ক্ষতিকর প্রসাধনী ব্যবহার করেন তাদের থেকে গর্ভে থাকা শিশুর ক্ষতি বেশি হয়। সেই শিশু জন্ম নেওয়ার পর ব্রেন ঠিকমতো গঠিত না হলে বিকলাঙ্গ হয়।’ বিএসটিআইয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুন্নেসা খানম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নিষিদ্ধ পণ্যগুলো বিক্রি হচ্ছে কি না, তা দেখতে আমরা সব জায়গায় মনিটর করি।
বিএসটিআইয়ের টিম নিয়মিত ল্যাবে এনে পণ্যগুলো পরীক্ষা করছে। যেগুলোয় মারকারির মতো ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো নতুন করে নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া চলছে। নিষিদ্ধ পণ্যগুলো বাজারে বা পারলারে লুকিয়ে বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি মিরপুর-১ নম্বর এলাকায় এ ধরনের ক্ষতিকর প্রসাধনীর বিরুদ্ধে বড় একটি অভিযান পরিচালিত হয়। প্রতিটি বাজার ও মার্কেট সমিতিকে সতর্ক করা হয়েছে। আমাদের জনবল ও ক্ষমতায় কিছুটা সীমাবদ্ধতা আছে। এর মধ্য থেকে সর্বোচ্চ কাজ করার চেষ্টা করছি। এ ক্ষেত্রে এসব ক্রিম ব্যবহারকারীদের সতর্ক হতে হবে।’
সূত্র ঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
Excellent
ReplyDeleteIt is very helpful for everybody
ReplyDelete